বাংলাদেশ-ভারত আন্ত‍ঃদেশ যোগাযোগে স্বচ্ছতা প্রয়োজন

সালেক সুফী

ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ নেপাল, ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের অবাধ রেল এবং সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হলে চারটি দক্ষিণ এশিয়া দেশগুলোর মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যের সুযোগ সম্প্রসারিত হবে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে ভারতের রেল যোগাযোগ সুবিধা উন্মুক্ত করা হয়েছে। এই বিষয়টি নিষ্পত্তি করার আগে উভয় দেশের যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে বিস্তারিত ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়েছে কিনা জানি না।

ভারত ছাড়াও এই ব্যাবস্থায় বাংলাদেশ-নেপাল রেল যোগাযোগ সম্প্রসারিত হবে কি না সেটি নিশ্চিত হয়েছে বলে মনে হয় না। ভারত অবশ্যই এই ব্যবস্থায় পূর্ব থেকে পশ্চিমে রেল যোগাযোগের কারণে  লাভবান হবে। জানা প্রয়োজন এই ব্যবস্থায় কি পরিমাণ লাভ হবে বাংলাদেশের?

তাই ব্যবস্থাটি চালু হওয়ার আগেই ভারত-বাংলাদেশ রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় উভয় দেশের লাভ-ক্ষতির খতিয়ান নির্ধারণ জরুরি। ভারত এখন পর্যন্ত চিকেন নেক দিয়ে বাংলাদেশ-নেপাল বা ভুটান বাণিজ্য যোগাযোগ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করেনি। বাংলাদেশ-নেপাল বিদ্যুৎ বিনিময় ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ঝুলে আছে।

অস্বীকার করা যাবে না বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ১৬ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অনেক দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধান হয়েছে। তবে সাধারণ দৃষ্টিতে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের লাভের পরিমাণ অনেক বেশি।  তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন ব্যবস্থা ভারতের কারণে ঝুলে আছে।

বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে প্রবাহমান নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। ভাটি অঞ্চলে পানির অভাবে কৃষক চাষাবাদে মারাত্মক সংকটে পড়েছে। দুটি সৎ প্রতিবেশীর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সুসম্পর্ক স্থাপনের প্রধান শর্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ। বাংলাদেশ কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতবিরোধী গোষ্ঠীর আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়ে ভারতকে স্বস্তি দিয়েছে। ভারতেও কিন্তু  বাংলাদেশের অনেক দণ্ডিত আসামি  এবং অভিযুক্ত অপরাধী লুকিয়ে আছে।

বাংলাদেশ-ভারত উন্মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা চালু করতে হলে ভারতকে অবশ্যই বাংলাদেশের সকল রপ্তানি পণ্যের উপর থেকে ট্যারিফ নন ট্যারিফ বাধা দূর করতে হবে। সকল দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বচ্ছ এবং উভয়পক্ষের জন্য লাভজনক হলে আমার মনে হয় না কেউ আপত্তি করবে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় জনগণ কিন্তু সর্বশেষ চুক্তি নিয়ে অন্ধকারে আছে। বিশেষত চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশের অধিকারকে প্রভাবিত করতে চাচ্ছে ভারত এই মর্মে অভিযোগ উঠেছে।

ভারত বাংলাদেশের বন্ধু দেশ। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সহায়ক দেশ। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় দুটি দেশ একই সমতলে অবস্থান করে চুক্তি করলে উভয় দেশের সুসম্পর্ক সুদৃঢ় এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 × 3 =