কঙ্কনা সেনশর্মার জন্মদিন আজ  

তার অভিনয়ে মুগ্ধ বাংলা থেকে আরব সাগরের তীর। প্রয়াত অভিনেতা ইরফান খান থেকে শুরু করে রণবীর কাপুর— তাবড় তাবড় তারকাদের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন তিনি। তিনি কঙ্কনা সেনশর্মা। আজ তার খ্যাতি কেবল কলকাতা শহরে আটকে নেই। তিনি আজ বাংলার গর্ব। শুভ জন্মদিন কঙ্কনা।

অপর্ণা এবং মুকুল শর্মার মেয়ে কঙ্কনার জন্ম ১৯৭৯ সালে। কলকাতার বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা করে দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে ইংরেজি ভাষায় স্নাতক পর্যায়ে পাশ করেন অপর্ণা-কন্যা।

১৯৮৩ সালে শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছিলে ‘ইন্দিরা’ ছবিতে। ২০০১ সালে প্রথম সুব্রত সেনের ছবি ‘এক যে আছে কন্যা’-এ তার অভিনয়ে হাতেখড়ি।

তার পরে একে একে প্রয়াত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘তিতলি’, অপর্ণার ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’-এ অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। অপর্ণা পরিচালিত সেই ছবির জন্য কঙ্কনা জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন।

বলিউডের অন্য ধারা থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক ছবি— কঙ্কনা জয়ী। ‘পেজ থ্রি’, ‘ওমকারা’, ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’, ‘ওয়েক আপ সিড’, ‘আজা নচ লে’, ‘লাক বাই চান্স’, ‘লগা চুনরি মে দাগ’— জনপ্রিয় ছবির নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কঙ্কনা।

‘আজা নচ লে’ ছবিতে মাধুরী দীক্ষিতের লাস্যের পাশে তার মুখ ভেঙিয়ে অভিনয় করা, তার চুল ঝাঁকিয়ে কথা বলা, তাঁর চাহনিতে মুগ্ধ দর্শক। নিজের অভিনয় দক্ষতার জোরেই তিনি বলিউড কাঁপিয়েছেন।

সেই ছবিতে কাজ করার সময়েই কঙ্কনার সঙ্গে আলাপ হয় অভিনেতা রণবীর শোরের। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব এবং প্রেম। বিয়ে করার পরিকল্পনা করার আগেই কঙ্কনা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন।

সমাজের চোখরাঙানি এড়াতে সেই বছরই, ২০১০ সালে বিয়ে করেন রণবীর-কঙ্কনা। ছেলে হারুণকে নিয়ে সারা জীবন একসঙ্গে থাকার প্রতিজ্ঞা করেন তারকা দম্পতি।

কিন্তু সময় এগোয়। পরিস্থিতি বদলায়। মানসিকতাও। বোঝাপড়ায় সমস্যা হতে শুরু করে। বিয়ের পাঁচ বছর পরে এক ছাদের তলায় না থাকার সিদ্ধান্ত নেন তারা। আলাদা হয়ে যান রণবীর এবং কঙ্কনা। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে আইনি বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাদের।

কিন্তু ছেলে হারুণের জন্য নতুন নিয়মে জীবন যাপন শুরু করে প্রাক্তন দম্পতি। আক্ষরিক অর্থেই নিজেদের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব কমিয়ে ফেলেন দুই শিল্পী। পারস্পরিক মনোমালিন্য ১০ বছরের ছেলেকে যেন প্রভাবিত না করে, সেই কথা মাথায় তাদের এই সিদ্ধান্ত।

লকডাউনের মধ্যে রণবীর এবং কঙ্কনা দু’জনেই বাড়িতে ছিলেন বলে এক সপ্তাহ মায়ের কাছে, এক সপ্তাহ বাবার কাছে ছিল ছেলে। সন্তানের জন্যে কাছাকাছি বাড়িও কিনেছেন তাঁরা।

তাদের দু’জনের মধ্যে সুসম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায় ২০১৬ সালেই। সেই সময়ে সদ্য আলাদা থাকা শুরু করলেও কঙ্কনা তার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘আ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’-এ রণবীরকে নিয়ে কাজ করেছিলেন।

প্রথম নয়, ২০০৬ সালে ‘নামকরণ’ নামে একটা স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে পরিচালক হিসেবে তার হাতেখড়ি। কিন্তু ‘আ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’ নিয়ে মাতামাতি হয় অনেক বেশি।

অভিনেত্রী হিসেবে তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ দেশের অন্যতম চলচ্চিত্র সমালোচকরা। তাও কেবল মাত্র গায়ের রঙের জন্য একাধিক বার পরিচালকেরা বাতিল করে দিয়েছিলেন কঙ্কনাকে। বলিউডে একাধিক বার প্রত্যাখ্যাত হয়েও হার মানেননি নায়িকা। দুরন্ত অভিনয় দিয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছেন তিনি।

কলকাতায় না হয় তিনি সফল অভিনেত্রীর কন্যা। কিন্তু আরব সাগরপাড়ের শহরে তিনি নবাগতা ছিলেন। না ছিল লাস্য, না ছিল কোনও পরিচয়। কেবল মাত্র নিজের প্রতিভায় ভর করে এই দৌড়ে সফল হয়েছেন তিনি।

আজ তিনি সফল অভিনেত্রী, সফল পরিচালক। সফল মা এবং মেয়েও বটে।

আনন্দবাজার

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

thirteen + six =