পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, চলতি বছরের মধ্যেই ঢাকার ১৯টি খালের দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজ সম্পন্ন করা হবে।খবর বাসস।
তিনি বলেন, ‘বর্ষার আগে আপাতত ৬টা খাল দখল ও দূষণমুক্ত করতে সক্ষম হব এবং খুব শিগগিরই আরো ৪টা খাল দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজ শুরু করব এবং এই বর্ষার আগেই বাকি আরও ৯টির কাজ শুরু হবে। অর্থাৎ এ বছরের মধ্যেই ১৯টি খালের দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
আজ রোববার রাজধানীর বাউনিয়ায় (পুলিশ স্টাফ কলেজের পিছনে) ডিএনসিসি এবং ডিএসসিসির আওতাধীন ৬টি খাল দখল ও দূষণমুক্ত করে খাল কেন্দ্রিক ব্লু নেটওয়ার্কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে পানি সম্পদ উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হয়তো এই ১৯টি খাল কেন্দ্রিক মাস্টার প্ল্যান করে ফেলা হবে। কোথায় কোথায় আমাদেরকে একদম সুনির্দিষ্ট আরো কিছু কাজ করতে হবে সেটা ঠিক করে আগামী বাজেটকে সামনে রেখে কাজগুলো ঠিক করে সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারের জন্য অর্থের সংস্থান করতে পারব বলে আশা করি।
খালের পাড়ে চাষাবাদ করা যায় কিনা তা নিয়ে একটা পরিকল্পনা আছে উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘খালের পাড়গুলোতে সবুজ ফিরিয়ে আনতে পারি কিনা, আর খালের মধ্যে মাছ আনা যায় কিনা এটা আমরা দেখতে চাচ্ছি। সেটা কেমন করে ফিরিয়ে আনবো, কেমন করে খালের প্রাণ ফিরিয়ে না যায় সেই চেষ্টাটা আমরা করবো। এটা আমাদের মন্ত্রণালয় কেন্দ্রিক উদ্যোগ হলেও নগরবাসীকে এ কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে।’
তিনি বলেন, ঢাকার খালগুলোর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে। খালগুলো হবে প্রাণকেন্দ্র।
উপদেষ্টা বলেন, ‘খালের আশেপাশের বাসা-বাড়ির বর্জ্যগুলো পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। একটা বিহীত করতে হবে যাতে খালে কেউ ময়লা ফেলতে না পারে। আর এজন্য স্থানীয়দেরকে দিয়ে আমরা একটা কমিটি করে দেব, দুই কিলোমিটার পর পর একটা কমিটি থাকবে, তারা এটি মনিটর করবে।’
স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নগরবাসীকে খালগুলোকে রক্ষার দাবি তুলতে হবে এবং সেখানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। আপনাদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে, অধিকারের জায়গা থেকে অধিকারের চর্চাও করতে হবে, দায়িত্বের জায়গা থেকে আপনাদেরকে দায়িত্বও পালন করতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যখন খাল পুনরুদ্ধার করতে যাব, আমাদেরকে খালের কিছু কিছু অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে, আমরা জানি তখন হয়তো কিছু বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হবে কিন্তু আমরা সম্মিলিতভাবে সে বাধা মোকাবেলা করবো। খালে যেন পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে পারি এটা আমাদের প্রাথমিক টার্গেট।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ সচিব নাজমুল আহসান, পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. হামিদুর রহমান খান এবং সমাপনী বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার সচিব মো. নিজাম উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও অতিরিক্ত সচিব মো. মাহমুদুল হাসান এবং খাল বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করেন ক্যাপ্টেন ফিদা হাসান।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তত্ত্বাবধানে এবং ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজউক, ঢাকা ওয়াসা, আরডিআরসি,বাপা, গ্রীন ভয়েস, ডব্লিউবিবিটি, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড অংশগ্রহণে খাল দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
আজ দখল ও দূষণমুক্ত কার্যক্রমের জন্য উদ্বোধন হওয়া এ ৬টি খাল হচ্ছে বাউনিয়া খাল, রূপনগর খাল, বেগুনবাড়ি খাল, মান্ডা খাল, কালুনগর খাল, কড়াইল লেক। এ ৬ টি খালের মোট দৈর্ঘ্য ২৩.৬৬ কিলোমিটার।