বিশ্বব্যাপী ৮৫ শতাংশ সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়মুক্তি অবসানের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে ইউনেস্কো সকল দেশকে ন্যায়বিচারের প্রতি তাদের অঙ্গীকার বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

সংস্থার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ বলা হয়, সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে দায়মুক্তির হার ছয় বছরে মাত্র ৪ পয়েন্ট কমেছে। এর মানে বিশ্বব্যাপী ৮৫ শতাংশ সাংবাদিক হত্যার মামলা অমীমাংসিত থেকে গেছে। ইউনেস্কো সাংবাদিকরা সত্যের সন্ধানে তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকেন উল্লেখ করে তাদের সুরক্ষা অপরিহার্য বলে মত দিয়েছে।

জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো শনিবার এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত দুই বছরের তুলনায় ২০২২-২৩ সালে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের হত্যাকাণ্ড বেড়েছে। এই দুই বছরে ১৬২ সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। এর মানে, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিবেদনটিতে সাংবাদিকদের মৃত্যুর হার বৃদ্ধিকে ‘আশঙ্কাজনক’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজোলায় এক বিবৃতিতে বলেন, ‘২০২২ ও ২০২৩ সাল সত্য অনুসন্ধানে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রতি চার দিনে একজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়।’ তিনি দেশগুলোকে ‘এ অপরাধগুলো যাতে বিচারহীন থেকে না যায়, তা নিশ্চিত করতে আ বেশি কিছু করার’ আহ্বান জানান।’ তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ঠেকাতে অপরাধীদের বিচার ও সাজাদান একটি বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে।

ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে বলা হয়, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এই দুই বছরে সেখানে ৬১ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রাণ হারান। অপরদিকে উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপে সবচেয়ে কম সংখ্যক সাংবাদিক প্রাণ হারান। অঞ্চল দুটিতে এই দুই বছর ছয় সাংবাদিক প্রাণ হারান।

প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, ২০১৭ সালের পর ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ফের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে অধিকাংশ সংবাদকর্মী প্রাণ হারান। ২০২৩ সালে ওই অঞ্চলগুলোতে ৪৪ জন সাংবাদিক প্রাণ হারান, যা ওই বছরের মোট নিহতের ৫৯ শতাংশ।

২০২২-২৩ সালে ১৪ নারী সাংবাদিক প্রাণ হারান, মোট নিহত সাংবাদিকদের নয় শতাংশ। যেখানে কমপক্ষে পাঁচজনের বয়স ছিল ১৫-২৪ বছরের মধ্যে। পৃথক দেশ থেকে নিহতদের প্রতিক্রিয়া অনুসারে সাংবাদিকদের প্রায় সব হত্যাকা-ই অমীমাংসিত রয়ে গেছে।  ২০০৬ সাল থেকে ইউনেস্কো চিহ্নিত ৮৫ শতাংশ মামলা এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে বা পরিত্যক্ত হয়েছে।

এটি ২০১৮ সালে ৮৯ শতাংশ ‘নন-রেজোলিউশন’ হার এবং ২০১২ সালে ৯৫ শতাংশ থেকে কিছুটা উন্নতি। কিন্তু ৭৫টি দেশের মধ্যে ইউনেস্কো দায়েরকৃত মামলার হালনাগাদ তথ্যের জন্য যোগাযোগ করে ১৭টি দেশের কাছ থেকে কোনো সাড়া পায়নি এবং নয়টি দেশ তাদের আবেদন গ্রহণ করার বাইরে আর কিছুই করেনি।

এমনকি ২১০টি মামলায়, যেখানে সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হয়েছে, সেখানেও সময় লেগেছে অন্তত চার বছর। রিপোর্টে ‘বিচার বিলম্বিত করা মানে বিচার অস্বীকার করা’ বলে উল্লেখ করা হয়।

ইউনেস্কো সাংবাদিক হত্যার দায়মুক্তির বিরুদ্ধে বার্ষিক প্রচার-প্রচারণা চালায়। সংস্থাটি চলতি বছরের ৬ নভেম্বর ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়নের সাথে সংকট ও জরুরি পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ওপর একটি বৈশ্বিক সম্মেলন আয়োজন করছে।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

2 × two =