বেড়াতে গেলেও বোতলজাত পানি উপহার

তাসনীম হাসান: ঈদুল ফিতরের পর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর রামপুরা এলাকার শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যাচ্ছিলেন নজরুল ইসলাম। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই কর্মকর্তা সেখানে যাওয়ার সময় কয়েক পদের নাশতার সঙ্গে কেনেন পাঁচ লিটারের বোতলজাত পানিও। পানি কেন, জানতে চাইলে চল্লিশোর্ধ্ব এই ব্যক্তি বলে ওঠেন, ‘ফোটানোর পরও ওয়াসার পানি লবণাক্ত আর গন্ধের কারণে মুখে দেয়া যাচ্ছে না। সবাই সুপেয় পানির কষ্টে আছেন। সে জন্য বেড়াতে যাওয়ার সময় সবার উচিত অন্য কিছু কম কিনে হলেও বোতলজাত পানি নিয়ে যাওয়া।’

একইভাবে কয়েক দিন আগে চান্দগাঁওয়ে বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন হালিমা বেগম। এই গৃহবধূও সঙ্গে নিয়ে যান পাঁচ লিটারের বোতলজাত পানি। শুধু নজরুল আর হালিমা নন, চট্টগ্রাম নগরীতে ঘুরলে এখন অনেকের হাতেই দেখা যাচ্ছে বোতলজাত পানি। কেউ নিয়ে যাচ্ছেন আত্মীয়ের বাসায়, কেউবা নিজের বাসায়। অতীতে এমনটি দেখা যায়নি।

এর কারণ একটাই। নগরবাসীর পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম ওয়াসা এখন সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পারছে না। এ কারণে পানির জন্য চট্টগ্রামের সবখানেই হাহাকার চলছে। রেশনিংয়ের কারণে ওয়াসার পানি আসছে অনিয়মিতভাবে। পানি পাওয়া গেলেও লবণাক্ততা আর শেওলা-পচা গন্ধে মুখে দেয়া যাচ্ছে না। আবার পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপের পানির টানে ভাটা পড়েছে। সেখান থেকে কিছু পানি পাওয়া গেলেও সেটিতে প্রচুর আয়রন।

সব মিলিয়ে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। অনেকটা প্রকৃতিনির্ভর হওয়ায় এ সমস্যার সমাধানও নেই। বৃষ্টি হলেই কেবল কমতে পারে সংকট।

ওয়াসার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলমান শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের লেকে পানির স্তর ৬৯ দশমিক শূন্য ২ ফুটে নেমে এসেছে, যা স্বাভাবিক অবস্থায় ১০৯ ফুট থাকে। এ অবস্থায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে পানি নির্গত হচ্ছে না। ফলে মোহরা ও শেখ রাসেল পানি শোধনাগারে হালদা নদীর পানি ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে পানির লবণাক্ততা অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিশোধিত পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা মানবদেহের জন্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পানি উত্তোলন প্রতিদিন প্রায় ১২ ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

এদিকে উত্তোলনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় পানির উৎপাদন ও সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে অস্বাভাবিকভাবে। সে কারণে পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। বিভিন্ন স্থানে রেশনিং পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ করার প্রয়োজন হচ্ছে।

স্বাভাবিক সময়ে ওয়াসা ৫০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার বদলে এখন ১২ ঘণ্টা উৎপাদন করায় সেটি ৪০ কোটি লিটারের নিচে নেমে এসেছে। ফলে পানিসংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বৃষ্টি ছাড়া আপাতত এ সমস্যার সমাধান নেই।

ওয়াসা সতর্ক না হওয়ায় জনগণকে খেসারত দিতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন।

তিনি বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে ওয়াসার পানিতে লবণের বিষয়টি কয়েক বছর আগেও আঁচ করা গিয়েছিল। কিন্তু ওয়াসা সতর্ক না হওয়ায় অর্ধেকেরও বেশি নগরবাসীকে এখন কষ্ট পেতে হচ্ছে।’

ভবিষ্যতে এ সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে ওয়াসা ও পিডিবি কিংবা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘কাপ্তাই লেকের পানি সারা বছর কীভাবে ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে বার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তাতে পানিতে লবণাক্ততার যে সমস্যা, আশা করি সেটা থাকবে না।’

দৈনিক বাংলা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

1 × 4 =