কাল তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া

প্রথম দুই টেস্ট জিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ টেস্টের অ্যাশেজ সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। জয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে তৃতীয় ম্যাচেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে চায় অসিরা। অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে  সিরিজ জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখতে তৃতীয় ম্যাচে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে না ইংল্যান্ড।

এসবের মাঝেও লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্টের বির্তক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছেই। তবে এ সবে  মাথা না ঘামিয়ে মাঠের লড়াইয়ে মনোযোগী হতে চায় দুই দলের খেলোযাড়রাই। লিডসের হেডিংলিতে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা থেকে শুরু হবে অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্ট।

বার্মিংহামের এজবাস্টনে সিরিজের প্রথম টেস্টে নাটকীয়ভাবে ২ উইকেটে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। ২৮১ রানের টার্গেটে ৮ উইকেটে ২২৭ রান তুলে হারের মুখে পড়ে অসিরা। হাতে ২ উইকেটে নিয়ে জয়ের জন্য ৫৪ রান দরকার ছিলো অস্ট্রেলিয়ার।

তবে পঞ্চম ও শেষদিনের শেষ ঘন্টায় ব্যাট হাতে জ¦লে উঠেন অস্ট্রেলিয়ার দুই লোয়ার অর্ডার ব্যাটার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ও নাথান লিঁও। নবম উইকেটে ৭২ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৫ রান তুলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়াকে রোমাঞ্চকর জয়ের স্বাদ দেন কামিন্স ও লিঁও। কামিন্স ৪৪ ও লিঁও ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন।

১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে লর্ডসে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া। স্টিভেন স্মিথের সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৪১৬ রান করে অসিরা। জবাবে বেন ডাকেটের ৯৮ ও হ্যারি ব্রুকের ৫০ রানের সুবাদে প্রথম ইনিংসে  ৩২৫ রান করে ইংলিশরা। এতে প্রথম ইনিংস থেকে ৯১ রানের লিড পায় অসিরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭৮ রান করে ইংল্যান্ডকে ৩৭১ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেয় সফরকারী অসিরা।

অধিনায়ক বেন স্টোকসের ১৫৫ রানের অসাধারন ইনিংসের পরও ৩২৭ রানে গুটিয়ে ম্যাচ হারে ইংল্যান্ড। ৪৩ রানের জয়ে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে লিড নেয় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু এই টেস্টেই বিতর্ক ডালপালা মেলেছে। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে জনি বেয়ারস্টোর আউট নিয়ে বির্তক-সমালোচনা ও আলোচনার জন্ম।

অস্ট্রেলিয়া পেসার ক্যামেরুন গ্রিনের বাউন্সার না খেলেই উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে যান বেয়ারস্টো। তিনি ভেবেছিলেন, বল ডড হয়ে গেছে। তখনই বল ছুঁড়ে বেয়ারস্টোর স্টাম্প ভাঙ্গেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি। অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের আউটের আবেদনে অন ফিল্ড আম্পায়াররা সাড়া না দিলেও বেয়ারস্টোকে স্টাম্প আউট ঘোষণা করেন থার্ড আম্পায়ার।

এই আউট নিয়ে বির্তক এখন তুঙ্গে। লর্ডসের লং রুমে অস্ট্রেলিয়ান দুই ক্রিকেটার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজার সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন এমসিসির সদস্যরা। এমন ঘটনায় দুঃখ প্রকাশের সাথে তিনজন সদস্যকে নিষিদ্ধও করেছে এমসিসি।

ম্যাচ শেষে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস তো বলেই দেন, অস্ট্রেলিয়ার মত এভাবে কখনও ম্যাচ জিততে চান না তিনি। ইংলিশ প্রধান কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম বলেন, তারা অস্ট্রেলিয়ার জায়গায় থাকলে বেয়ারস্টোকে আবারও ব্যাটিংয়ের জন্য ডাকা হতো। নিয়ম মেনেই ক্রিকেট খেলা উচিত সবার।

তবে সব বিতর্ক পিছনে পেলে এখন মাঠের লড়াইয়ে মনোযোগী হতে চায় উভয় দলই। লিডসে টেস্ট ক্যারিয়ারের শততম ম্যাচ খেলতে নামবেন অসি ব্যাটার স্টিভেন স্মিথ। বিশে^র ৭৪ ও অস্ট্রেলিয়ার ১৫তম ক্রিকেটার হিসেবে ১শ টেস্টের মাইলফলক স্পর্শ করবেন লংগার ভার্সনে এ পর্যন্ত ৯ হাজার ১১৩ রান করা স্মিথ। এজন্য এই টেস্টকে স্মরনীয় করে রাখাই মূল লক্ষ্য স্মিথের।

তিনি বলেন, ‘প্রথম দুই টেস্টে আমরা দারুন ক্রিকেট খেলেছি। ভালো খেলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চাই। দেশের হয়ে ১শ টেস্ট খেলা সবসময়ই গর্বের। আমি ভাগ্যবান দেশের হয়ে শততম টেস্ট খেলতে পারবো। জয় দিয়ে টেস্টটি স্মরনীয় করে রাখতে চাই।’

ইংল্যান্ডের জোর রুট বলেন, ‘আমাদের সব চিন্তা জুড়ে এখন তৃতীয় টেস্ট। সিরিজ জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে, এ ম্যাচে জিততেই হবে। সব আলোচনা-সমালোচনা -বির্তককে মাঠের বাইরে রেখে প্রতিপক্ষকে হারানো পরিকল্পনায় নিয়েই আমরা এখন ব্যস্ত। লিডসে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ভালো খেলে টেস্ট জিততে চাই আমরা।’

লিডসে খেলতে নামার আগে দুঃসংবাদ শুনতে হয়েছে  ইংল্যান্ডকে। লর্ডস টেস্টে ফিল্ডিংকালে কাঁধের ইনজুরিতে পড়ে পুরো অ্যাশেজ থেকেই ছিটকে গেছেন ওলি পোপ। পোপের জায়গায় খেলার সুযোগ পেতে পারেন ড্যান লরেন্স। ইংল্যান্ড দলে একমাত্র অতিরিক্ত ব্যাটার হিসেবে আছেন লরেন্সই।

তৃতীয় টেস্টে বিশ্রাম দেয়া হতে পারে অস্ট্রেলিয়ার পেসার জশ হ্যাজেলউডকে। টানা টেস্ট খেলার চাপ কমাতে হ্যাজেলউডকে নিয়ে ঝুঁিক নিতে রাজি নয় অস্ট্রেলিয়া টিম ম্যানেজমেন্ট। ২০২০-২১ মৌসুম ছাড়া টানা তিন টেস্ট খেলননি তিনি। অ্যাশেজের প্রথম দুই টেস্টে ৫৬ ওভার বোলিং করে ৮ উইকেট নিয়েছেন তিনি। হ্যাজেলউডের পরিবর্তে এই টেস্টে দেখা যেতে পারে স্কট বোল্যান্ডকে।

কাফ মাসেলের (পায়ের পেছনের মাংসপেশি) ইনজুরিতে অ্যাশেজ শেষ স্পিনার নাথান লিঁওর। তার পরিবর্তে তরুণ স্পিনার টড মারফিকে দলে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ইনজুরি কাটিয়ে তৃতীয় টেস্টের জন্য ইংল্যান্ড দলে ফিরেছেন স্পিন অলরাউন্ডার মঈন আলি।

বার্মিংহামে সিরিজের প্রথম টেস্টে আঙুলের ইনজুরিতে পড়েন মঈন। এজন্য লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে পারেননি মঈন। অবসর ভেঙ্গে বার্মিংহামে সিরিজের প্রথম টেস্ট দিয়ে ২১ মাস পর বড় সংস্করনে খেলতে নেমে ব্যাট হাতে ৩৭ রান ও বল হাতে ৪৭ ওভারে ২০৪ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি।

সিরিজের তৃতীয় টেস্টও জিতলে ২০০১ সালের পর ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজ জয়ের স্বাদ নিবে অস্ট্রেলিয়া। এখন পর্যন্ত ৩৫৮ টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। এরমধ্যে অসিদের জয় ১৫২টিতে ও ইংলিশদের জয় ১১০টিতে। ৯৬টি টেস্ট ড্র হয়।

ইংল্যান্ড দল: বেন স্টোকস (অধিনায়ক), মঈন আলী, জেমস এন্ডারসন, জনি বেয়ারস্টো (উইকেটরক্ষক), স্টুয়ার্ট ব্রড, হ্যারি ব্রুক, জ্যাক ক্রলি, বেন ডাকেট, ড্যান লরেন্স, ওলি রবিনসন, জো রুট, জশ টাং, ক্রিস ওকস ও মার্ক উড।

অস্ট্রেলিয়া দল: প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), স্কট বোল্যান্ড, অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেটরক্ষক), ক্যামেরন গ্রিন, মার্কাস হ্যারিস, জশ হ্যাজেলউড, ট্র্যাভিস হেড, জশ ইংলিশ, উসমান খাজা, মার্নাস লাবুশেন, টড মারফি, মাইকেল নেসার, ম্যাথিউ রেনশ, স্টিভ স্মিথ, মিচেল স্টার্ক ও ডেভিড ওয়ার্নার।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fourteen − thirteen =