প্রাণবন্ত ও হাসিখুশি রোজি সিদ্দিকী

নাহিন আশরাফ

অসাধারণ অভিনয় করে সকলের প্রিয় হয়েছেন রোজি সিদ্দিকী। স্বাভাবিক অভিনয়ের জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছেন সবার। টিভি নাটক, সিনেমা, মঞ্চ সব মাধ্যমেই তিনি সাবলীল। সব মাধ্যমে অভিনয় করলেও থিয়েটার থেকে তিনি নিজেকে কখনো বিচ্ছিন্ন করেননি।

‘থিয়েটার আরামবাগ’এ নাট্যচর্চার মাধ্যমে তার মঞ্চযাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৯-১৯৯৩ পর্যন্ত এই দলের হয়ে অভিনয় করেন রোজি। এরপর ১৯৯৩ সালে ‘ঢাকা থিয়েটার’র সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ১৯৯৩ সালে গৌতম ঘোষের পরিচালনায় ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার মাধ্যমে চলচ্চিত্র অঙ্গনে পদার্পণ করেন তিনি। ৩৪ বছরের বেশি সময় ধরে অভিনয় জগত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ব্যাপক সফল সিনেমা ‘পরাণ’। এ সিনেমায় খল চরিত্রে অভিনয় করে বেশ সাড়া পেয়েছিলেন। এই প্রথম তার নেগেটিভ ক্যারেক্টারে অভিনয় করা।

১৯৯৩ সালে রোজি ‘ঢাকা থিয়েটার’-এ নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এ দলেরই হয়ে কাজ করছেন। এ দলের হয়ে মঞ্চে তার উল্লেখযোগ্য নাটক হলো ‘হাত হদাই’, ‘প্রাচ্য’, ‘বন পাংশুল’, ‘ধাবমান’ ইত্যাদি। তার অভিনীত নাটক ‘পঞ্চনারী আখ্যান’ থিয়েটার জগতে বেশ সারা ফেলেছিল। তিনি মনে করেন ‘জন্মভূমি’ ধারাবাহিক নাটকটি তার অভিনয় জীবনের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। নাটকটির নাট্যকার ছিলেন প্রয়াত আমজাদ হোসেন। প্রযোজনা করেছিলেন ফখরুল আবেদিন দুলাল। ওই নাটকে রোজি একটি সংলাপ বলতেন, ‘এমএ পাস ফাস্ট ক্লাস’। এই সংলাপটি তখন মানুষের মুখে মুখে ফিরত। ১৯৮৯ সালে নাটকটি প্রচার হয়। এখনো মানুষ তাকে বিজলি চরিত্রটির কথা বলেন। কোথাও গেলে আজও বিজলি নামে ডাকেন সবাই তাকে। ‘জন্মভূমি’ নাটকটি সারাদেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছিল। নাটকটি প্রচার হওয়ার পর ১০ বছর একা একা ঘর থেকে বের হতে পারতেন না বলে জানান রোজি এক সাক্ষাৎকারে। তাকে দেখলেই প্রচুর মানুষ ভিড় করতেন। তার বয়স তখন ছিল ১৬ বছর। জনপ্রিয়তার কিছুই বুঝতেন না তিনি। অন্তত ৫ বার পুলিশ ভিড় থেকে তাকে উদ্ধার করেছিল। তখন কোথাও বের হলে বাসা থেকে কাউকে সঙ্গে নিয়ে বের হতেন।

বিভিন্ন ক্যারেক্টারে দেখা গেছে রোজিকে; কখনো মা, কখনো প্রেমিকা আবার কখনো ভাবি। যেকোনো শিল্পীর আসল পরিচয় ফুটে ওঠে তখন যখন তিনি চরিত্রের প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেকে বদলে ফেলতে পারেন। রোজি নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে থাকেন। রোজি জানান, অভিনয় শিখতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে থিয়েটার, তাই থিয়েটার তার নেশা। যতই অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকুন না কেন কখনোই এ নেশা থেকে বের হতে পারেননি। চলচ্চিত্রে তাকে বেশি দেখতে না পাওয়ার কারণ হচ্ছে তার মেয়েরা যখন ছোট ছিল, তাদের সময় দিতে গিয়ে চলচ্চিত্রের কথা তিনি ভাবেননি। কিন্তু এখন মেয়েরা বড় হয়েছে, যে যার মতো নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে। তাই এখন চলচ্চিত্রের সময় দেবার কথা ভাবছেন রোজি। চলচ্চিত্র তাকে অভিনয়ে দেখা যায়। এছাড়া সারা বছরই তিনি টেলিভিশনের ধারাবাহিক নাটক নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

১৯৯৩ সালে অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। রোজি সিদ্দিকী ও শহীদুজ্জামান দম্পতিকে বলা হয় চিরসবুজ দম্পতি। যেখানে তারকাদের বিবাহ জীবন নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের সমালোচনা সেখানে তারা দুইজনে ২৫ বছরেরও বেশি সময় এক সাথে পার করেছেন। তাদের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে, তমা ও শ্রীমা। বরাবরই বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তাদের ভালোবাসার রহস্য জানতে চাওয়া হয়। অন্য দম্পতিদের মতো তাদের মধ্যে ঝগড়া মান অভিমান সবই হয়। কিন্তু হাসি আর খুনসুটির মধ্যে দিয়ে জীবনের এতোগুলো বছর একসাথে পার করেছেন তারা। নিজের বিয়ের কথা স্মরণ করে বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কাউকে ভালোবাসি সে কথা বলা হয়নি। তবে আমার বাসায় গিয়ে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন শহীদুজ্জামান সেলিম। বাবাকে গিয়ে বলেছিলেন, ‘দুই পরিবার মিলে যদি বিষয়টি মেনে নেন, তাহলে আমরা বিয়ে করব। আর যদি না মেনে নেন, তাহলেও আমরা নিজেরাই বিয়ে করব।’ রোজি আর শহীদুজ্জামান সেলিম কখনো আলাদাভাবে প্রেম করেননি, কাজের মধ্যেই তাদের সম্পর্ক এগিয়েছে।

তারা মনে করেন, এত বছর সংসার টিকিয়ে রাখা কোনো বড় ব্যাপার না। এরচেয়ে আরো দীর্ঘ সময় ধরে তাদের পুরানো প্রজন্ম বাবা-মা, দাদা-দাদি একসাথে সংসার করেছেন। বরং এখনো অনেকটা পথ একসাথে চলা বাকি। কিন্তু তাদের দাম্পত্য জীবন আলোচিত হবার কারণ হচ্ছে তারা মিডিয়ায় কাজ করেন। সবসময় সাধারণ মানুষের ধারণা মিডিয়ায় কাজ করা মানুষের সংসার টিকে না ও তাদের মধ্যে নানা ধরনের দ্বন্দ্ব থাকে। শুধু মিডিয়া কেন যেকোনো পেশার দম্পতিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। কিন্তু সেই দ্বন্দ্ব কাটিয়ে, সকল মান অভিমান ভুলে গিয়ে দিন শেষে আবার দুজন একসাথে এক হয়ে যাওয়ার নামই সংসার। রোজি সিদ্দিকী বলেন, হয়তো কেউ বিশ্বাস করবে না যে তাদের মধ্যে প্রচুর ঝগড়া হয়। খুব সামান্য বিষয় যা এড়িয়ে যাওয়া যায় তা নিয়েও তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়। কিন্তু এগুলো যেকোনো সম্পর্কের অংশ। ঝগড়া মান অভিমানকে খুব বড় করে দেখবার কিছু নেই। একসাথে থাকলে তা হবেই।

স্বামী শহীদুজ্জামান সেলিমকে নিয়ে সবসময় গর্ববোধ করেন তিনি। স্বামীর জন্মদিনে সোস্যাল মিডিয়াতে লেখেন, শুভ জন্মতিথি। জন্মে সমৃদ্ধ বাংলার থিয়েটার, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও বাংলা সংস্কৃতির সকল মাধ্যম। তুমি আছো বলে আমি ও আমার পরিবারের সকলে গর্বিত। আজ বলছি তোমার মতো পরিশ্রমী, সৎ, নিষ্ঠাবান, বিপদে-আপদে, আনন্দে পাশে দাঁড়ানোর মতো মানুষ বিরল। প্রার্থনা করি, হে ঈশ্বর দীর্ঘ আয়ু দাও। অনিবার্য, অমার্জনীয়, অবর্ণনীয়, অবিশ্বাস্য, অফুরন্ত প্রেম অনুভব রইল।

ব্যাক্তি জীবনে রোজি সিদ্দিকী খুবই প্রাণবন্ত ও হাসিখুশি একজন মানুষ। সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে তিনি পছন্দ করেন। এছাড়া তার আদুরে স্বভাব ও বন্ধুসুলভ আচরণের জন্য সহকর্মীদের সাথে তার বেশ ভালো সম্পর্ক।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: সেলিব্রেটি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

8 − six =