কর্পোরেট জবাবদিহিতা ও পরিবেশগত ন্যায়বিচারের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মঙ্গলবার পরিবেশ সুরক্ষায় ঐক্যবদ্ধতার পুনর্কল্পনার ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, পরিবেশগত অধিকার রক্ষা করা সরকার, ব্যবসা সংগঠনসমূহ, নাগরিক সমাজ এবং সকল সম্প্রদায়ের সম্মিলিত দায়িত্ব। খবর বাসস।

পরিবেশ উপদেষ্টা ব্যাংককে জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রের ‘এশিয়ায় কর্পোরেট টেকসই এবং পরিবেশগত অধিকার’ সম্মেলনের উদ্বোধনী (পূর্ণাঙ্গ) অনুষ্ঠানে ঢাকায় তার বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তৃতা প্রদানকালে এই কথা বলেন।

এ বছর সম্মেলনটির প্রতিপাদ্য হল ‘একটি পরিষ্কার, স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই পরিবেশের অধিকার: কর্পোরেট সম্পৃক্ততার পুননির্ধারণ’।

শক্তিশালী আইনি কাঠামোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে রিজওয়ানা বলেন, কিছু দেশ বিচারিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে পরিবেশগত অধিকারকে স্বীকৃতি দিলেও, অনেক দেশে এখনও এই বিষয়ে সুস্পষ্ট সাংবিধানিক বিধানের অভাব রয়েছে।

রিজওয়ানা বলেন, ‘এটি পরিবর্তন করতে হবে’। তিনি আরো বলেন, অতিরিক্ত মানবকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি জীববৈচিত্র্যকে অবহেলিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে।

সতর্কতামূলক নীতি, দূষণকারীর অর্থ প্রদানের নীতি এবং যথাযথ পরিশ্রমের ওপর ভিত্তি করে টেকসই উন্নয়নের মূলে নিহিত আইনি কাঠামো তৈরির আহ্বান জানান তিনি।

পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণে দ্বৈত মানদণ্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর রপ্তানির ওপর কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়, কিন্ত উন্নত দেশগুলো থেকে আমদানি  নিয়ন্ত্রিত হয় শিথিল মান দ্বারা।

জাহাজ ভাঙা শিল্পের বিপজ্জনক বর্জ্য স্থানান্তর এবং বায়ু দূষণের মানদণ্ডের বৈষম্য তুলে ধরে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন পশ্চিমা নাগরিকের ফুসফুস বাংলাদেশের নাগরিকদের ফুসফুস থেকে আলাদা নয়।’

তার বক্তব্যে কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) উল্লেখ করে তিনি যুক্তি দেন যে, স্বতঃপ্রবৃত্ত এসআর নীতিসমূহ অপর্যাপ্ত। তিনি আরো বলেন, প্রকৃত কর্পোরেট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।

ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন দায়িত্ব এড়াতে না পারে তা নিশ্চিত করতে পরিবেশ উপদেষ্টা রাষ্ট্রসমূহকে কার্যকর আইনে মূল পরিবেশগত নীতিসমূহ অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।

তিনি পরিবেশগত তথ্যাবলি জনসাধারণের আয়ত্ত্বাধীন করার জন্য আইনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং বলেন যে, কিছু দেশে তথ্য অধিকার আইন থাকলেও অনেকে কর্পোরেট পরিবেশগত তথ্য বাদ দেয়, যা মানুষের ব্যবসায়িক প্রভাব মূল্যায়ন করার ক্ষমতা সীমিত করে দেয়।

বিধিনিষেধের অধীনে সক্রিয়তা দমন করার পরিবর্তে তিনি রাষ্ট্র প্রধান ও সরকারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনসাধারণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষাকারীদের সুরক্ষার জন্য আহ্বান জানান।

বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত সফল আইনি মডেল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিবেশগত ট্রাইব্যুনালগুলোকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।

উপদেষ্টা বাংলাদেশে, সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততার ফলে পরিবেশগত আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য কর্পোরেশনসমূহের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।

বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধারের জন্য উৎসর্গকৃত ক্ষতিপূরণ তহবিলের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান ক্ষতি করে তা নিয়ন্ত্রণ করার চেয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা দিয়ে কর্পোরেট দায়িত্ব শুরু করা উচিত।

কর্পোরেট ‘গ্রিনওয়াশিং’ এর বিরুদ্ধে সতর্ক করে তিনি সরকার, ব্যবসা এবং সম্প্রদায়কে ‘টেকসই সার্টিফিকেশন’ বিশ্বাসযোগ্য কিনা তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

পরিবেশগত সক্রিয়তাকে দুর্বল করে এমন ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে সতর্ক করে তিনি মিডিয়ায় দেয়া বর্ণনার ওপর সম্মিলিত নিয়ন্ত্রণের ওপরও জোর দেন।

‘দায়িত্বশীল সমাজ গঠনে পরিবেশগত শিক্ষার ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে রিজওয়ানা বলেন, ‘পরিবেশগত সচেতনতা নিয়ে বেড়ে ওঠা শিশুরা কর্পোরেট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, সরকার বা কর্পোরেশন কারোরই প্রকৃতি ধ্বংস করার অধিকার নেই।

রিজওয়ানা বলেন, ‘যদি আপনি একটি সমুদ্র, একটি বন বা একটি পাহাড় তৈরি করতে না পারেন, তবে আপনার সেগুলো ধ্বংস করার কোনো অধিকার নেই।’

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nine − eight =