নায়িকা একটি উপাধি: অধরা

এই সময়ের সম্ভাবনাময় নায়িকা অধরা খান। ‘নায়ক’ সিনেমার মাধ্যমে ঢাকাই চলচ্চিত্রে ২০১৮ সালে অভিষেক হয় তার। এ সিনেমায় তার নায়ক ছিলেন বাপ্পি চৌধুরী। ওই সময়ই মুক্তি পায় তার দ্বিতীয় ছবি ‘মাতাল’। এখানে তিনি সাইমন সাদিকের বিপরীতে অভিনয় করেন। দুই সপ্তাহে পরপর দুটি সিনেমা দিয়ে ঢাকাই সিনেমার মানুষদের কাছে প্রিয় মুখ হয়ে যান অধরা খান। এরপর মুক্তি পায় তার অভিনীত তৃতীয় সিনেমা ‘পাগলের মত ভালোবাসি’। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক সিনেমা এসেছে হাতে। মুক্তির অপেক্ষায় আছে তার অভিনীত কয়েকটি সিনেমা। বর্তমানে কয়েকটি সিনেমার শুটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন নায়িকা। ফেব্রুয়ারি মাসে মুক্তি পেতে যাচ্ছে তার নতুন সিনেমা সৈকত নাসির পরিচালিত ‘সুলতানপুর’। অধরা খান তার সিনেমা ক্যারিয়ার, নতুন ছবি ও নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন রঙবেরঙ এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুম আওয়াল।

অভিনয় জীবন শুরু কিভাবে?

২০১৪ সালে নায়িকা হওয়ার ইচ্ছেটা মাথায় আসে। আমার বোন নাচ শিখতো। বোনের দেখাদেখি আমিও নাচ শিখতে শুরু করলাম। নাচ শিখতে শিখতে অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়। আমাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন নাচের শিক্ষক। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই স্বপ্ন পূর্ণ হয়ে গেল। আমার নাচের শিক্ষক আমাকে নিয়ে কনফিডেন্ট ছিলেন। তিনি বললেন, আমার ভেতর অভিনেত্রী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মূলত আমার সেই টিচারের উৎসাহ উদ্দীপনায় আমি অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি।

অভিনয়ে প্রিয় শিক্ষক মনে করেন কাদের?

অভিনয় শেখার বিষয়টা আসলে অনেক কঠিন। শেখার কোনো শেষ নেই। প্রতিনিয়তই শিখছি। আর মাত্রই তো আমার ক্যারিয়ার শুরু। যতটুকু শিখেছি তার জন্য অনেকের কাছে ঋণী আমি। তারপরও যদি নাম বলি, তাহলে শুরুতেই বলবো আমার প্রথম সিনেমা ‘নায়ক’ এর পরিচালক ইস্পাহানি আরিফজানের কথা। ইস্পাহানি স্যার অনেক কিছু শিখিয়েছেন আমাকে। প্রফেশনালিজম কী, একটা ভালো কাজ করতে হলে কত ধৈর্য লাগে তার কাছে শিখেছি। ‘নায়ক’ সিনেমার প্রযোজক ছিলেন মিজানুর রহমান ভাই। এর পরের সিনেমা ‘মাতাল’ এর প্রযোজক ছিলেন শরীফ চৌধুরী। তাদের কাছেও আমি ঋণী। একটা সিনেমা করতে গেলে অর্থ লগ্নির বিষয়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যারা সিনেমায় অর্থ লগ্নি করেন আমরা তাদের কথা বলতে ভুলে যাই। আমি আমার সিনেমার প্রযোজকদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। আমার কো আর্টিস্ট ছিলেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী আপু। তার কাছেও অনেক কিছু শিখেছি। ‘নায়ক’ সিনেমাটি মুক্তির দিক থেকে প্রথম ও আমার টার্নিং পয়েন্ট ছিল। যদিও তার আগেও দুটি সিনেমায় আমি অভিনয় করেছি। সিনেমা একক কাজ না এটা একটা টিম ওয়ার্ক। যতগুলো সিনেমায় অভিনয় করেছি প্রতিটা সিনেমার টিমের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

নিজের অভিনীত প্রিয় সিনেমা কোনটি?

প্রথমেই বলবো ‘নায়ক’ সিনেমার কথা। এরপর ‘মাতাল’, ‘পাগলের মতো ভালোবাসি’, ‘সুলতানপুর’। এখন কাজ করছি ওয়াহিদুজ্জামান ডায়মন্ডের ‘দখিন দুয়ার’ সিনেমায়। এটা খুব ভালো একটা কাজ হচ্ছে বলে আমি বিশ্বাস করি।

সিনেমায় প্রথম অনুভূতি কেমন ছিল?

প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম ‘পাগলের মত ভালবাসি’ সিনেমা দিয়ে। পরিচালক ছিলেন রহিম বাবু। অন্যরকম এক অনুভূতি হয়েছিল। ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। প্রথম সিনেমা মুক্তির দিনের অনুভূতিও অন্যরকম ছিল। ‘নায়ক’ সিনেমা যখন মুক্তি পেল অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করেছিল। আবেগ ছিল অন্য রকম। আসলে এই অনুভূতিগুলো ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে?

এখন হাতে আছে শফিক হাসানের ‘বাটপার’, মাজহার বাবুর ‘ঠোকর’, সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামানের ‘দখিন দুয়ার’। এখন ‘দখিন দুয়ার’ নিয়ে ব্যস্ততা চলছে। এই সিনেমায় ছয়টা ঋতু দেখানো হবে। একটা সিনেমার জন্য পুরো একটি বছর যখন ব্যয় করতে হয় তখন সেটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়।

‘দ্য ফ্রড’, ‘ঠোকর’ এর কাজ শুরু হয়েছে?

অনেকদিন ধরে শফিক হাসানের সঙ্গে ‘দ্য ফ্রড’ (বাটপার) সিনেমায় কাজের কথা চলছিল। গল্পটা মজার। আমার ভালো লেগেছে। বিনোদনে ভরপুর একটি সিনেমা হবে এটি। আমার চরিত্রটিও আধুনিক, অন্যরকম একটি চরিত্র। দেশে বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় শুটিং হবে সিনেমাটির। আসলে ‘বাটপার’ সিনেমার কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। তবে মনে হচ্ছে মার্চ মাসের শেষ পর্যন্ত ‘দখিন দুয়ার’ সিনেমার কাজ করতে হবে। এর পরেই শুরু হবে ‘বাটপার’। অন্যদিকে ঠোকরের প্রি প্রোডাকশনের কাজ চলছে। প্রি প্রোডাকশনের কাজ শেষ হলে শুরু হবে শুটিং।

‘দখিন দুয়ার’ এ অভিনয় করছেন। কতদূর এগোলো শুটিং?

‘দখিন দুয়ার’ সিনেমার বেশ কিছু দৃশ্যায়ন হয়েছে। এরই মধ্যে তীব্র শীতে কুয়াশার দৃশ্যগুলো শুটিং করা হয়েছে জানুয়ারি মাসের আগে। ফেব্রুয়ারি মাসেও শুটিং আছে।

‘সুলতানপুর’ ১০ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাবে। প্রত্যাশা কী?

‘সুলতানপুর’ নিয়ে অনেক প্রত্যাশা ছিল এবং আছে। কিন্তু টিম থেকে প্রমোশনাল অ্যাক্টিভিটি তেমন দেখছি না। যেভাবে প্রমোশনাল ওয়ার্ক ডিজাইন হয়েছিল সেভাবে প্রোমোশন হয়নি। দর্শক যদি না জানতে পারে একটা ভালো সিনেমা আসছে; তাহলে কিভাবে হলে যাবে তারা! তবুও আমার বিশ্বাস সিনেমাটি দর্শক দেখবেন এবং সবার ভালো লাগবে।

‘সুলতানপুর’ ছবিতে আপনার চরিত্রটি কেমন?

আমার চরিত্রটি অন্যান্য নায়িকা চরিত্রের মতো নয়। খুব সাধারণ লুকে দর্শক দেখবে। আরোপিত কিছু নেই। একটি এলাকাকে কেন্দ্র করে ছবির গল্প এগিয়েছে।

মিডিয়াতে এসে স্বপ্ন কতটা পূর্ণ হয়েছে?

আসলে সেরকম কোনো স্বপ্ন বা প্রত্যাশা নিয়ে মিডিয়াতে পা রাখা হয়নি। একটা রঙিন স্বপ্ন নিয়ে বিভোর ছিলাম এক সময়। হুট করেই সবকিছু হয়ে গেছে। হঠাৎ করে নাচ শিখতে যাওয়া, তারপর সিনেমায় পা রাখা। স্বপ্নগুলো প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নিজের ভেতর। রোজ স্বপ্ন দেখি। সামনে আরও ভালো কিছু হবে আশা রাখি।

নায়িকা ও অভিনেত্রীর মধ্যে কী পার্থক্য আছে?

প্রত্যেক মানুষ তার জায়গা থেকে নায়ক অথবা নায়িকা। আমার মনে হয়, সিনেমার গল্পে যে চরিত্রগুলোর উপর বেশি ফোকাস হয় তাদের হয়তো দর্শক নায়ক ও নায়িকা বলে থাকেন। আমি মনে করি, অভিনেতা ও অভিনেত্রী হয়ে ওঠাটাই বড় বিষয়। নায়িকা একটি উপাধি মাত্র।

ধারাবাহিক জার্নি সম্পর্কে বলবেন?

আমার জন্ম ৫ মে ঢাকা শহরে। স্কুল ছিল মিরপুর প্রগতি স্কুল ও বাংলা স্কুল। এরপর কমার্স কলেজে পড়েছি। সব মিলিয়ে আমার শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে ঢাকা শহরে। পরিবার, সিনেমা, ব্যক্তিগত জীবন সব মিলিয়ে বেশ দিন কেটে যাচ্ছে।

অবসর কিভাবে কাটাতে ইচ্ছে করে?

অবসর নিজের পছন্দের কবিতার বই, গল্পের বই পড়ে কাটে। সমুদ্র আমাকে ভীষণ রকম টানে। সমুদ্রের সঙ্গে নিজের অনেক কিছু ভাগ করে নেওয়া যায়। অবসর সময়টা আমি সমুদ্র পাড়ে গিয়ে কাটাতে চাই। অনেক সময় কাটাইও। এটাই ভালো লাগে।

প্রিয় রঙ, প্রিয় ফুল, প্রিয় শখ?

আমার প্রিয় রঙ সাদা, কালো আর নীল। পছন্দের  ফুল কৃষ্ণচূড়া। প্রিয় শখ হলো বই পড়া ও ঘোরাঘুরি।

সবার উদ্দেশ্যে কী বলতে চান…

আমি চাই দেশের সিনেমা হলগুলো আবার আগের মতো জেগে উঠুক। দর্শক সিনেমা দেখুক। অনেক ভালো ভালো সিনেমা তৈরি হোক। দেশের চলচ্চিত্রে যে সোনালি সময় ছিল সেটা আবার ফিরে আসুক।

সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

রঙবেরঙকেও ধন্যবাদ।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: আলাপচারিতা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × 3 =