আহমেদাবাদ, ১৯ নভেম্বর ২০২৩ (বাসস) : বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৪০ রান করেছে স্বাগতিক ভারত। রাহুল সর্বোচ্চ ৬৬ ও কোহলি ৫৪ রান করেন। অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্ক ৫৫ রানে ৩ উইকেট নেন।
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। শুভমান গিলকে নিয়ে ঝড়ো গতিতে শুরু করেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ৪ ওভারে দলকে ৩০ রান এনে দেন রোহিত-গিল।
ভালো শুরুর পর পঞ্চম ওভারে দলীয় ৩০ রানে বিচ্ছিন্ন হয় উদ্বোধনী জুটি । পেসার মিচেল স্টার্কের করা পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে পুল শট খেলতে গিয়ে মিড অনে এডাম জাম্পাকে ক্যাচ দেন জুটিতে ৭ বল খেলে মাত্র ৪ রান করা গিল।
গিল ফিরলেও, দ্রুত রান তোলার কাজটা স্বাচ্ছেন্দ্যে করেছেন রোহিত ও তিন নম্বরে নামা বিরাট কোহলি। স্টার্কের করা সপ্তম ওভারের প্রথম তিন বলেই বাউন্ডারি মারেন কোহলি। ১০ম ওভারে স্পিনার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের প্রথম দুই বলে ১০ রান তুলে নেন রোহিত। তৃতীয় বলে উইকেট ছেড়ে ছক্কা মারতে গিয়ে কভার পয়েন্টে ট্রাভিস হেডের দারুন ক্যাচে বিদায় ঘটে ৪৭ রান করা রোহিতের। এই বিশ্বকাপে চতুর্থবারের মত হাফ-সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে থামলেন তিনি। ৩১ বল মোকাবেলায় ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা মারেন ভারতীয় অধিনায়ক। দ্বিতীয় উইকেটে রোহিত-কোহলি ৩২ বলে ৪৬ রান যোগ করেন।
অধিনায়কের বিদায়ে উইকেটে এসে বাউন্ডারিতে রানের খাতা খুলেন গত দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা শ্রেয়াস আইয়ার। কিন্তু আইয়ারকে এবার ৪ রানে থামিয়ে দেন অসি দলপতি কামিন্স। ৫ বল ও ৫ রানের ব্যবধানে রোহিত ও আইয়ারকে হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত।
১১তম ওভারে দলীয় ৮১ রানে ভারতের তিন ব্যাটার প্যাভিলিয়নে ফেরার পর জুটি বাঁধেন কোহলি ও লোকেশ রাহুল। উইকেট পতন ঠেকাতে সাবধানে খেলতে থাকেন তারা। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং ও পরিকল্পনামাফিক ফিল্ডিংয়ে স্ট্রাইক রোটেট করেই খেলতে হয়েছে কোহলি ও রাহুলকে। এতে ৯৭ বল চার-ছক্কার দেখা পায়নি ভারত। এ অবস্থাতেই ২৬তম ওভারে ওয়ানডেতে ৭২তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান ৫৬ বল খেলা কোহলি। বিশ্বকাপের নক আউটের দুই ম্যাচে ৫০এর বেশি রান করার তালিকায় সপ্তম ব্যাটার হিসেবে নাম তুলেন কোহলি। বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম ব্যাটার হিসেবে দ্বিতীয়বারের মত টানা পাঁচ ম্যাচে ৫০এর বেশি রানের ইনিংস খেললেন তিনি। এর আগে ২০১৯ আসরে এ রকের্ড গড়েছিলেন তিনি।
হাফ-সেঞ্চুরির পর ইনিংস বড় করতে পারেননি কোহলি। কামিন্সের বলে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড আউট হওয়ার আগে ৪টি চারে ৬৩ বল খেলে ৫৪ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন ইনফর্ম কোহলি। চতুর্থ উইকেটে ১০৯ বলে ৬৭ রান যোগ করেন কোহলি-রাহুল। বিশ্বকাপে এবারের আসরে ১১ ইনিংসে ৭৬৫ রান করেছেন কোহলি। যা বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
কোহলির বিদায়ে উইকেটে আসেন রবীন্দ্র জাদেজা। আবারও জুটি গড়ার চেষ্টা করেন রাহুল ও জাদেজা। ৩৫তম ওভারে ওয়ানডেতে ১৭তম অর্ধশতক পূর্ণ করতে ৮৬ বল খেলেছেন রাহুল।
রাহুলের অর্ধশতকের পর জাদেজার বিদায় নিশ্চিত করেন পেসার জশ হ্যাজেলউড। ২২ বলে ৯ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন জাদেজা। রাহুল-জাদেজা জুটি ৪৪ বলে ৩০ রান যোগ করেন।
এরপর সূর্যকুমার যাদবকে নিয়ে ৪১তম ওভারে ভারতের রান ২শতে নেন রাহুল। অস্ট্রেলিয়ার টাইট বোলিংয়ের বিপরীতে ১১ থেকে ৪০ ওভারের মধ্যে মাত্র দু’টি বাউন্ডারি মারতে সক্ষম হয় ভারতীয় ব্যাটাররা। এর মাধ্যমে এবারের বিশ্বকাপে মিডল ওভারে সবচেয়ে কম বাউন্ডারি মারা দল হিসেবে নাম লেখালো ভারত। এছাড়া প্রথমবারের মত এই বিশ্বকাপে মাঝের ওভারে ছক্কা মারতে ব্যর্থ হলো ভারত।
দলের ২শতে পৌঁছানোর ওভারেই বিদায় নেন রাহুল। স্টার্কের অফ স্টাম্পের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। মাত্র ১টি চারে ১০৭ বল খেলে ৬৬ রানের ধৈর্য্যশীল ইনিংস খেলেন রাহুল। তার স্ট্রাইক রেট ছিলো ৬১ দশমিক ৬৮। এবারের বিশ্বকাপে ৫০এর বেশি রানের ইনিংস খেলা ব্যাটারদের মধ্যে যা সর্বনি¤œ স্ট্রাইক রেট। সূর্য-রাহুল ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ২৫ রান যোগ করেন।
দলীয় ২০৩ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে রাহুল ফেরার পর সূর্য ও টেল এন্ডারদের দৃঢ়তায় ৫০ ওভার খেলে সব উইকেট হারিয়ে ২৪০ রানের সংগ্রহ পায় ভারত। শেষ দিকে সূর্য ১৮, কুলদীপ ১০, মোহাম্মদ সিরাজ অপরাজিত ৯, মোহাম্মদ সামি ৬ ও জসপ্রিত বুমরাহ ১ রান করেন। অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডারদের দারুন ফিল্ডিংয়ের কারনে ইনিংসে ১৩টি চারের বেশি মারতে পারেনি ভারতের ব্যাটাররা।
বল হাতে অস্ট্রেলিয়া স্টার্ক ৫৫ রানে ৩টি, হ্যাজেলউড ৬০ রানে ও কামিন্স ৩৪ রানে ২টি ক্ের উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নেন ম্যাক্সওয়েল ও জাম্পা। এই বিশ্বকাপে মোট ২৩ উইকেট শিকার করলেন জাম্পা। এর মাধ্যমে বিশ্বকাপের এক আসরে স্পিনার হিসেবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারে শ্রীলংকার মুত্তিয়া মুরলিধরনের রেকর্ড স্পর্শ করলেন জাম্পা। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ২৩ উইকেট নিয়েছিলেন মুরলিধরন।